- প্রথম অধ্যায় (বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পরিমাপ) – বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে?
- প্রথম অধ্যায় (বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পরিমাপ) – রাশি, একক ও এককের বিভিন্ন পদ্ধতি
- প্রথম অধ্যায় (বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পরিমাপ) – দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও সময়ের একক
প্রতিদিনের জীবনে পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। একইভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পরিমাপ খুবই প্রয়োজনীয়। বর্তমান সময়ের গবেষণাগুলো প্রায় সময়ই পরিমাপকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। যেমন নতুন ডিজাইনের একটা গাড়ির গতি কেমন হবে, কোন এলাকাতে দূষণের মাত্রা কেমন, কোন সার প্রয়োগে গাছের বৃদ্ধি কেমন হচ্ছে এরকম বিভিন্ন উদাহরণ দেয়া যায়। তাই বিজ্ঞান পড়া শুরুর প্রথমেই আমাদের পরিমাপের ধারণাগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।
রাশি (Quantity)
বস্তুজগতের যা কিছু আমরা পরিমাপ করতে পারি, তাকে রাশি বলে। যেমন কোন স্থানের তাপমাত্রা, একটা টেবিলের দৈর্ঘ্য, কোন গ্রহের ঘূর্ণনে প্রয়োজনীয় সময় প্রভৃতি। কিন্তু কেউ যদি বলে আমার অনেক দুঃখ, এই দুঃখের পরিমাণ রাশি হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ দুঃখ একটা অনুভূতি, এটা বস্তুজগতের অংশ না।
মৌলিক রাশি ও লদ্ধ রাশি
রাশির অগণিত উদাহরণ দেয়া যায়, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ক্ষেত্রফল, আয়তন, ওজন, তাপমাত্রা, অবস্থান, বেগ, উপাদান, তাপ পরিবাহিতা, ঘনত্ব, তাপ, চাপ, গলনাঙ্ক, স্ফূটনাঙ্ক এবং আরো অনেক।
কিন্তু মজার একটা বিষয় হলো মাত্র ৭টি রাশি ব্যবহার করেই সব রাশি পাওয়া সম্ভব। এই ৭টি রাশিকে মৌলিক রাশি বলে। একাধিক মৌলিক রাশির সমন্বয়ে লদ্ধ রাশি পাওয়া যায়। এই রাশিগুলো হলো দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বিদ্যুৎ প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ এবং আলোক ঔজ্জ্বল্য।
এর বাইরে অন্য রাশিগুলো লদ্ধ রাশি। যেমন আমরা ক্ষেত্রফল রাশিটির সাথে পরিচিত, যেটা আসলে দুটো দৈর্ঘ্যের গুণফল।
একক (Unit)
যদি কেউ বলে আমার বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব ৫, তাহলে এর কোন অর্থ পাওয়া যায় না। যদি বলা হয় ৫ কিলোমিটার কিংবা ৫ মাইল তখনই কেবল এটা অর্থবহ হয়ে ওঠে। এই কিলোমিটার বা মাইল হলো একক।
যেকোন কিছু পরিমাপ করতে একক প্রয়োজন হয়। যদি আমরা মিটার বা কিলোমিটার ব্যবহার না-ও করি আমরা কোন না কোনভাবে একক ব্যবহার করি মাপজোকের সময়। একটা সহজ উদাহরণ দিই, পাড়ায় ফুটবল খেলার সময় আমরা গোলপোস্টের দৈর্ঘ্য ঠিক করতে পা দিয়ে মাপতাম। এক্ষেত্রে কোন একজনের পায়ের দৈর্ঘ্যকে আমরা একক নির্ধারণ করছি এবং তার সাথে তুলনা করে গোলপোস্টের দৈর্ঘ্য ঠিক করছি।
তাহলে একক কী? একক হলো একটা আদর্শ মান, যার সাথে তুলনা করে আমরা পরিমাপ করতে পারি। মানে কিনা পাঁচ কেজি অর্থ হলো এক কেজি যতটা তার পাঁচ গুণ ভর। একইভাবে আমি ২ কিলোমিটার হেঁটেছি অর্থ হলো এক কিলোমিটারের ২ গুণ বা ১ মিটারের ২০০০ গুণ হেঁটেছি।
মৌলিক একক ও যৌগিক একক
মৌলিক রাশিগুলোর একককে মৌলিক একক বলে। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বিদ্যুৎ প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ এবং আলোক ঔজ্জ্বল্য এই সাতটি রাশির একককে মৌলিক একক ধরা হয়।
একাধিক মৌলিক এককের সমন্বয়ে গঠিত হয় লদ্ধ একক বা যৌগিক একক। ক্ষেত্রফলের একক হবে দৈর্ঘ্যের একক × দৈর্ঘ্যের একক বা দৈর্ঘ্যের এককের বর্গ। একারণে দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে মিটার ব্যবহার করা হলে ক্ষেত্রফলের একক হয় বর্গ মিটার বা মিটার২, যেটা নির্দেশ করে মিটার × মিটার।
এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি
প্রতিদিনের জীবনে আমরা অনেকরকম একক ব্যবহার করি। যেমন একটু আগে পা দিয়ে গোলপোস্টের দৈর্ঘ্য মাপার একটা উদাহরণ দিলাম। এখন দৈনন্দিন কাজের জন্য এবং প্রচলন অনুযায়ী অনেকরকম একক ব্যবহারে তেমন কোন অসুবিধা না থাকলেও যদি আমাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে কোন কাজ করতে হয় বা সূক্ষ্ম হিসাব প্রয়োজন হয়- তখন অবশ্যই এমন একক দরকার যেটা সবাই বুঝবে এবং তার পরিমাণ সুসংজ্ঞায়িত তথা সুনির্দিষ্ট হবে।
তো এজন্য ১৯৬০ সালে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিকভাবে কিছু একক ব্যবহারের সিদ্ধান্তে সম্মত হোন। মৌলিক রাশিগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এককগুলোকে SI একক বলে। SI বলতে বোঝায় International System of Unit (এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি)। সংক্ষিপ্ত রূপ SI কারণ এটা ফরাসি ভাষায় Système International (d’Unités) এসেছে। মৌলিক SI এককগুলোর ভিত্তিতে আরো যৌগিক SI একক পাওয়া যায়।
SI পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলো নিচের ছকে দেখানো হলো:
রাশি (Quantity) | একক (Unit) |
---|---|
সময় (time) | সেকেন্ড (second) |
দৈর্ঘ্য (length) | মিটার (meter) |
ভর (mass) | কিলোগ্রাম (kilogram) |
বিদ্যুৎ প্রবাহ (electric current) | অ্যাম্পিয়ার (ampere) |
তাপমাত্রা (temperature) | কেলভিন (kelvin) |
পদার্থের পরিমাণ (amount of substance) | মোল (mole) |
দীপন তীব্রতা (luminous intensity) | ক্যান্ডেলা (candela) |
(এর বাইরে বইয়ে মৌলিক এককের তালিকায় বৈদ্যুতিক আধানের একক কুলম্ব উল্লেখ করা আছে। ক্ষেত্রফলের একক দুটি মিটারের গুণফল আমরা যেমন দেখেছি, তেমনি কুলম্ব মূলত অ্যাম্পিয়ার ও সেকেন্ডের গুণফল- অর্থাৎ কুলম্ব প্রকৃতপক্ষে একটি যৌগিক একক।)
এককের আরো কিছু পদ্ধতি
SI এককের বাইরে বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে এককের আরো কিছু পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন-
MKS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক মিটার (m), তাপমাত্রার একক কেলভিন (K), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
CGS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক সেন্টিমিটার (cm), ভরের একক গ্রাম (g), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
FPS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক ফুট (ft), ভরের একক পাউন্ড (lb), সময়ের একক সেকেন্ড (s)।
অনেক সময় MKS পদ্ধতি ও SI পদ্ধতিকে অনেকে একই মনে করে। আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। MKS পদ্ধতিতে তিনটি মৌলিক রাশির নির্দিষ্ট একক আছে, অন্যদিকে SI পদ্ধতিতে মৌলিক ৭টি রাশিরই সুসংজ্ঞায়িত একক আছে। যেকারণে সব রাশিকে MKS পদ্ধতিতে পরিমাপ করা সম্ভব না, কিন্তু SI পদ্ধতিতে সম্ভব।