আমি যদি তোমাকে প্রশ্ন করি ৫টি তরজুম আর ৬টি বাঙ্গি মিলে কয়টি কাঁঠাল হয়, তবে তুমি কি উত্তর দিতে পারবে? যদি না পারো, তাহলে জেনে রাখো 5 m আর 6 kg মিলে কত sec তাও তুমি বলতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় 5 J + 10 n m = কত kg m² s⁻¹ কিংবা 5 ft + 10 m + 51 cm = কত inch তাহলে উত্তর দেয়া কিন্তু খুবই সম্ভব। কেন জানতে চাও? তাহলে তোমাকে মাত্রা বুঝতে হবে।

একটি রাশিতে বিভিন্ন মৌলিক রাশি কোন সূচক বা ঘাতে রয়েছে, তাকে মাত্রা বলে।

মাত্রা প্রকাশে ব্যবহৃত প্রতীক:

রাশিমাত্রার প্রতীক
ভরM
দৈর্ঘ্যL
সময়T
তাপমাত্রাK
পদার্থের পরিমাণmol
বৈদ্যুতিক প্রবাহA
দীপন তীব্রতাCd

আপাতত প্রথম তিনটি জানা আমাদের বেশি দরকার হবে।

এখন আমরা মাত্রার বিষয়টা অনুভবের চেষ্টা করি।

যেমন ধরা যাক ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ। আসলে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ তো আলাদা কিছু না- যেটা একটু বেশি লম্বা সেটাকে আমরা দৈর্ঘ্য বলি, যেটা একটু কম সেটা প্রস্থ। তাহলে ক্ষেত্রফলে দুটো দৈর্ঘ্য গুণ আছে বলতে পারি। তাহলে, ক্ষেত্রফলের মাত্রায় দৈর্ঘ্যের ঘাত হবে ২, অর্থাৎ ক্ষেত্রফলের মাত্রা L²। একইভাবে আয়তনের মাত্রা L³।

বেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে সংগঠিত সরণ, সরণ মূলত দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যকে সময় দ্বারা ভাগ করলে বেগ পাওয়া যায়। ভাগের ক্ষেত্রে ঘাত ঋণাত্মক হয়। তাহলে বেগের মাত্রা LT⁻¹।

একক থাকতে মাত্রা কেন প্রয়োজন? কারণ মৌলিক রাশিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্নরকম একক ব্যবহার হতে পারে, মাত্রার বেলাতে তেমনটি না। আবার বলের একক N (নিউটন) দেখে বোঝা যায় না এটা কোন কোন মৌলিক রাশি নিয়ে তৈরি হয়েছে, কিন্তু বলের মাত্রা MLT⁻¹ থেকে বোঝা যায় এটা ভর ও দৈর্ঘ্যের গুণফলকে সময় দ্বারা ভাগ করে পাওয়া গেছে।

মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র একই মাত্রা থাকলে যোগ-বিয়োগ করা যায় এবং যোগ-বিয়োগ অবশ্যই একই এককে এনে করতে হয়। আর গুণ ভাগের ক্ষেত্রে এককও গুণ বা ভাগ করতে হবে (যেমন 30 m / 6 s = 5 m/s)।

যেমন- 5 m ও 6 kg আমরা যোগ করতে পারবো না, কারণ মাত্রা ভিন্ন।

কিন্তু 5 ft + 10 m + 51 cm যোগ করা যাবে, কারণে এখানে সবগুলোই দৈর্ঘ্যের একক বা সবগুলোর মাত্রা L। কিন্তু এরা একই একক না, অর্থাৎ সরাসরি আমরা যোগ করতে পারবো না, আমরা উত্তর যে এককে চাচ্ছি সে এককে কনভার্ট করে নিতে হবে। ওপরে inch এককে উত্তর চাওয়া হয়েছিলো, inch-এ কনভার্ট করে নিলে ঘটনাটা দাঁড়াবে 60 inch + 393.7 inch + 20.079 inch, অর্থাৎ উত্তর হলো 473.779 inch।

5 J + 10 N m = কত kg m² s⁻² বের করার ক্ষেত্রে এটা জানা দরকার যে J (জুল) হলো কাজের একক এবং এটা একটা লদ্ধ একক। মূলত kg m² s⁻¹ কে আমরা নিউটন (N) নাম দিয়েছি, আর N m কে জুল (J) নাম দিয়েছি। তো 1 J = 1 N m = 1 kg m² s⁻², তিনটা মূলত একই, শুধু ভিন্নরূপে লেখা। প্রত্যেকটার মাত্রা ML²T⁻²। মানে 5 J আর 10 N m কে 5 kg m² s-2 আর 10 kg m² s⁻²-ও বলা যায়, অর্থাৎ উত্তর 15 kg m² s⁻²।

এই লেখার শেষের অংশগুলো হয়ত অনেকের জন্যই দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই বা এখনই খুব ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করার দরকার নেই। আমরা যখন বল, কাজ, শক্তি এগুলো নিয়ে পড়বো তখন এই জিনিসগুলো ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। তখন আরেকবার এই অংশটা ঘুরে যেয়ে মিলিয়ে নিও!