১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০। শেষ একবারের জন্য ভয়েজার-১ এর ক্যামেরা ঘোরানো হলো পৃথিবীর দিকে। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ভয়েজার-১ পৃথিবীতে পাঠালো তার সর্বশেষ ছবি, Pale Blue Dot। যেখানে পৃথিবী শুধুই নীলচে-সাদা একটা বিন্দু…

অনেক মানুষেরা ভাবতো পৃথিবী সবকিছুর কেন্দ্রে, যাকে ঘিরে ঘুরছে সবকিছু। যখন আমরা আরো জানার চেষ্টা করেছি, শুধু আমাদের ক্ষুদ্রতাকে নতুন করে উপলদ্ধি করতে হয়েছে। সূর্য কেন্দ্রে, সবকিছু ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। নাহ! সূর্যটাও কেন্দ্রে না। এরকম আরো অসংখ্য সূর্য, গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সিপুঞ্জ,…

কিন্তু সবকিছুর কেন্দ্র কোথায়? আমরা জানি না। তবে আমাদের বর্তমান জ্ঞান একটা চমকপ্রদ ব্যাপারের দিকে নিয়ে যায়। সবকিছু এক বিন্দুতে ছিলো, তারপর স্থান ক্রমশ সম্প্রসারণ হয়েছে। সবকিছু দূর থেকে দূরে যাচ্ছে। কিন্তু যেখান থেকেই দেখা হোক, তা একইরকম দেখাবে- যত কাছের জিনিস, তত ধীরে এবং যত দূরের, তত দ্রুত সবকিছু দূর থেকে দূরে সরে গেছে। যেন মহাবিশ্বের সব বিন্দুই তার কেন্দ্র।

আমাদের গল্পটাও এরকম। আমাদের প্রত্যেকের একটা গল্প আছে, প্রত্যেকের গল্পের মূল চরিত্র সে নিজে। শত কোটি স্বপ্ন, বিশ্বাস, ভালোবাসা, হতাশা, ব্যর্থতা- প্রত্যেকের গল্পগুলো তৈরি হয় নিজেকে ঘিরে, তারপর নিজের কাছের মানুষদের।

আর এজন্য, এজন্য যখন মহাবিশ্বের বিশালতায় যখন এক বিন্দু হিসেবেও নিজেকে খুঁজে পাওয়া কঠিন, তখনও তুমি অর্থহীন নও। কারণ তুমি মানুষ, কারণ তোমার প্রাণ আছে, কারণ তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে উপলদ্ধি, অনুভূতি, চিন্তাশক্তি, বিবেকবোধ দিয়ে।

আমি কে? আমার কর্তব্য কি? এই প্রশ্নের উত্তর তোমাকে খুঁজে নিতে হবে। চারিদিকের অজস্র অসঙ্গতির মাঝে দিকভ্রান্ত হলে চলবে না। নিজের লক্ষ্য ঠিক করে সেদিকে স্থির থাকতে হবে। লক্ষ্য বলতে শুধু শিক্ষক, গবেষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া না, বরং কেন আমরা তা হতে চাই এই প্রশ্নের উত্তর জানা।

আমাদের জানতে হবে আমরা কী করছি এবং কেন করছি। যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়- তুমি পড়াশোনা করছ কেন, এই প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছে কি? যদি না থাকে তবে চিন্তা কর, নিজের কাছে সৎ থাকো। যদি উত্তর খুঁজে না পাও, সমস্যা নেই। অন্যভাবে প্রশ্ন কর, আমি কেন পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছি না? যদি এই প্রশ্নের উত্তর হয় পরিবারের চাওয়া বা সমাজের প্রচলনের কারণে- তাহলেও কোন সমস্যা নেই। চিন্তা কর, যেহেতু আমি পড়াশোনা করছি, কীভাবে এটা থেকে আমি সর্বোচ্চ ভালো কিছু আনতে পারি। আমরা যেন নিছক ভালো ফলাফল, ভালো জায়গায় চান্স, আর অর্থ-সম্পদ-ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তির মোহে পড়ে না যাই।

আমার অস্তিত্ব দিয়ে পৃথিবীর বুকে কোন পদচিহ্ন আমি রেখে যেতে চাই এই প্রশ্ন নিজেকে করতে হবে। যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে, শুধু তখনই হয়ত জীবনের অর্থ খুঁজে নিতে পারবে।