পরাবৃত্ত কী?
‘এই ক’টা দিন কষ্ট কর, একবার ভার্সিটিতে একটা সিট পেয়ে যাও- বাকি জীবনে কোন কিছুর আর অভাব হবে না’- এরকম মোটিভেশনগুলোর সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু পড়াশোনার উদ্দেশ্য কি এরকম হওয়া উচিৎ? বা জীবনের উদ্দেশ্য কি ভার্সিটি কিংবা চাকরিতে শেষ হয়ে যাওয়া উচিৎ? আমরা তা মনে করি না।
পরাবৃত্ত পড়াশোনা সম্পর্কিত একটা প্লাটফর্ম। প্রাথমিকভাবে আমরা ইন শা আল্লাহ NCTB-র পাঠ্যক্রমের আলোকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব। আমরা চেষ্টা করব সুন্দরভাবে কনসেপ্টগুলো পরিষ্কার করে বিষয়গুলো উপস্থাপনের। পাশাপাশি, NCTB-র পাঠ্যক্রমের বাইরেও আলাদাভাবে আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে ইন শা আল্লাহ।
আমরা চাই শুধু নাম্বার আর সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার বদলে বোঝা, শেখা ও জানা হোক পড়াশোনার উদ্দেশ্য। আমরা চাই অসুস্থ প্রতিযোগিতা না, সহযোগিতার সম্পর্ক হোক সবার। আমরা চাই ‘I hate politics’ প্রজন্ম না, বরং বাস্তবসচেতন প্রজন্ম গড়ে উঠুক। এমন প্রজন্ম যারা চিন্তা করতে শিখবে। চিন্তা করবে সমাজকে সুন্দর করার, মানুষের দুঃখ দূর করার, সৃষ্টির সেবা করার, স্রষ্টার প্রিয় হওয়ার।
আমাদের প্রেরণা
বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাক্রম বারবার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা ভালোর দিকে না হয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে একরকম পঙ্গু বানিয়ে ফেলার মত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। একটু চিন্তা করলে এর কারণটা বোঝাও সহজ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এবং অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দিবে যে শোষকের জন্য সচেতন তরুণসমাজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণরা যত সুশিক্ষিত ও সচেতন হয়ে উঠবে, এটা শোষকের জন্য তত বেশি ভয়ের কারণ। এজন্য শোষকরা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাইবে সবার আগে।
আবার কাউকে যদি কোন মতে দীক্ষিত করতে হয়, তার জন্যও শিক্ষাব্যবস্থার মত শাণিত অস্ত্র নেই। বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ক্ষমতার পালাবদলে কীভাবে ইতিহাস এখানে বদলে যায়। যদি নিজেদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধগুলো ভুলিয়ে নব্য বস্তাপঁচা মতবাদগুলোতে দীক্ষিত করতে হয়, তার জন্যও পাঠ্যবইগুলোর মত অস্ত্র কম আছে। আর এই সবকিছুর উদাহরণ নতুন করে দেয়ার প্রয়োজন নেই, আমরা দেখেছি কীভাবে বইগুলোতে বিভিন্নভাবে নারীবাদ, সমকামিতা, জেন্ডার আইডিওলোজি প্রভৃতির প্রথম পাঠ নিয়ে আসা হচ্ছে।
কথাগুলো গত বছরগুলোর শিক্ষাক্রমের আলোকে। পরাবৃত্তের পরিকল্পনা করা গত বছরের মাঝামাঝি। তারপর আল্লাহর রহমতে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে একটা বড় পরিবর্তন পেয়েছি দেশে। তবে ওপরের কথাগুলো পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। বরং আসলে শুধু বাংলাদেশ না, পুরো পৃথিবীর প্রেক্ষিতেই ওপরের কথাগুলো প্রাসঙ্গিক।
সমস্যাগুলো আসলে শুধু পাঠ্যপুস্তক আর মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে সীমিত না, তার থেকে অনেক অনেক বেশি বিস্তৃত। এখানে পারদর্শিতা দেখে চাকরি হয় না, হয় দুর্নীতির পথে অথবা কপাল ভালো থাকলে সার্টিফিকেটে। আমাদের পড়াশোনাও তাই শেখার জন্য হয় না, সার্টিফিকেটের জন্য হয়। আমরা সহযোগিতায় না, প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। তাই অন্যদের পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যেতে চাই, সবাইকে সাথে নিয়ে না। আর শত চেষ্টার পরেও সে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে হতাশায় ডুবতে হয় বহুজনকে।
আমরা আমাদের নিজেদের জন্য এবং আমাদের পরবর্তীদের জন্য নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন আমাদের প্রেরণা।
আমরা সমাজের বাস্তবতা অস্বীকার করি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এর মধ্য থেকেও ভালো কিছু করা সম্ভব। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা থেকে নেয়ার অনেক কিছু আছে, প্রয়োজন সচেতনতা ও চিন্তাশীল মন। পরাবৃত্ত সেই মনন ছড়িয়ে দিতে চায়।
আমাদের ক্ষমতা সীমিত। সবকিছু বদলে দিবো আমরা, এটা কিন্তু আমরা ভাবি না। তবে যতক্ষণ জীবন না ফুরোচ্ছে- ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা ও প্রার্থনা করে যাওয়া, এটুকুই তো সর্বোচ্চ যা আমরা করতে পারি, তাই না?