প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে সম্পর্ক

This entry is part 4 of 11 in the series এসএসসি রসায়ন

যে কথাটা আমাদের আলোচনায় বারবার আসবে, বিজ্ঞান হলো প্রকৃতির নিয়ম দিয়ে প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টা। এবং প্রকৃতিতে সবকিছুর সাথে সবকিছু মিশে আছে। বিজ্ঞানের শাখাবিন্যাস- রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, গণিত প্রভৃতি আমরা আলাদা করি এজন্য যেন আমরা পড়াশোনা ও গবেষণাতে একটা নির্দিষ্ট দিকে ফোকাস রাখতে পারি। কিন্তু বাস্তবে সব শাখা সব শাখার সাথে একেবারে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।

জীববিজ্ঞানের সাথে রসায়নের সম্পর্ক

মনে হতে পারে রসায়নে আমরা জড়জগৎ নিয়ে কাজ করি, জীববিজ্ঞানের সাথে এর খুব বেশি সম্পর্ক থাকার কথা না। কিন্তু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সীমারেখার মধ্যে আসলে জীবের আত্ম-চেতনা, সুখ-দুঃখ-যন্ত্রণার অনুভূতি, ইচ্ছাশক্তি প্রভৃতি সেভাবে আসে না- বরং আমরা জীবদেহের বিভিন্ন ঘটনাগুলোর পেছনে বাহ্যিক রাসায়নিক পরিবর্তনগুলোই মোটাদাগে দেখতে পারি। যেকারণে জীববিজ্ঞানের একটা বড় অংশ রসায়নের মধ্যে পড়ে। উদাহরণ দেয়া যায়-

  • উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ
    • সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পাতার সাহায্যে বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মাটি থেকে মূল দিয়ে পানি শোষণ করে। এরপর সবুজ পাতায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোফিলের সাহায্য কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানির রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে শর্করাজাতীয় খাদ্য তথা গ্লুকোজ তৈরি করে।
  • প্রাণীদেহে খাদ্য পরিপাক
    • প্রাণীদেহে সরাসরি গ্লুকোজ তৈরি হয় না। উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী থেকে শর্করা ও প্রোটিন (আমিষ) জাতীয় খাবার আসে। প্রাণীদেহে তা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিপাক হয়ে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন হয় যা দেহের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে।
  • জীবের গঠন
    • জীবদেহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে গড়ে ওঠে

পদার্থবিজ্ঞানের সাথে রসায়নের সম্পর্ক

রসায়ন আসলে মোটাদাগে পদার্থবিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। পদার্থবিজ্ঞান পদার্থ ও শক্তি নিয়ে কাজ করে, এবং রসায়ন পদার্থের পরিবর্তনের জায়গাটুকুতে গুরুত্ব দেয়। রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই হয়। অনেক বিষয় দেখা যায় দুটো শাখাতেই সমানভাবে গুরুত্ব পায়, যেমন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন।

  • শক্তি উৎপাদন
    • বর্তমান সময়ে শক্তির বড় উৎস হলো বিদ্যুৎ। পদার্থবিজ্ঞানে বিদ্যুৎ যখন আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে আছে, তখন বিদ্যুৎ শক্তি তৈরির পেছনে রয়েছে রাসায়নিক বিক্রিয়া।
    • প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লা থেকে যানবাহন চলার জন্য শক্তি উৎপাদন, এখানেও রয়েছে রসায়ন।
  • ভৌত রসায়ন
    • রসায়নের গুরুত্বপূর্ণ শাখা ভৌত রসায়ন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব ও সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত
  • নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ও নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি একই সূত্রে গাঁথা

গণিতের সাথে রসায়নের সম্পর্ক

গণিত বড় অংশে বিজ্ঞানের ভাষা। বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা, ঘনমাত্রা, পরিমাণ প্রভৃতি সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

  • গণনা
    • রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দ্রবণের ঘনমাত্রা নির্ণয়, যৌগের সংযুক্তি নির্ণয়, বিক্রিয়ার হার নির্ণয় প্রভৃতিতে গণিতের সাধারণ ধারণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল জটিল সূত্র ও ধারণার প্রয়োজন হয়।
Series Navigation<< প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়নের পরিসরপ্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়নে গবেষণা প্রক্রিয়া >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *