- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়নের ক্রমবিকাশ
- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়ন পাঠের গুরুত্ব
- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়নের পরিসর
- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে সম্পর্ক
- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) – রসায়নে গবেষণা প্রক্রিয়া
- প্রথম অধ্যায় (রসায়নের ধারণা) –পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে সতর্কতা
- দ্বিতীয় অধ্যায় (পদার্থের অবস্থা) – কণার গতিতত্ত্ব ও পদার্থের ভৌত অবস্থা
- নবম অধ্যায় (এসিড-ক্ষারক সমতা) – এসিড, ক্ষারক ও ক্ষারের ধারণা
- নবম অধ্যায় (এসিড-ক্ষারক সমতা) – জলীয় দ্রবণে এসিড ও ক্ষারের আচরণ
- নবম অধ্যায় (এসিড-ক্ষারক সমতা) – প্রশমন বিক্রিয়া ও লবণ
- নবম অধ্যায় (এসিড-ক্ষারক সমতা) – লঘু এসিডের শনাক্তকারী ধর্মসমূহ ও পরীক্ষামূলক প্রমাণ
এসিডের জলীয় দ্রবণে পানির পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে লঘু এসিড বলা হয়। কোন লঘু এসিড দ্রবণ এর বিভিন্ন ধর্ম ও বিক্রিয়া থেকে শনাক্ত করা যায়।
মনে করিয়ে দিচ্ছি, লঘু এসিড ও দুর্বল এসিড এক বিষয় নয়। লঘু এসিড বলতে বোঝায় দ্রবণে পানির পরিমাণ বেশি। দুর্বল এসিড বলতে বোঝায় পানিতে অল্প পরিমাণে বিয়োজিত হয়। যেমন H2SO4 একটি সবল বা তীব্র এসিড। পানির পরিমাণ যত বেশিই হোক, অর্থাৎ যতই লঘু এসিড নেয়া হোক- এটা পুরোপুরি বিয়োজিত হবে এবং তীব্র এসিডই থাকবে।
এসিডের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য ও লিটমাস পরীক্ষা
স্বাদ: সকল লঘু এসিড টক স্বাদযুক্ত। যেমন টারটারিক এসিড থাকার কারণে তেঁতুলের স্বাদ টক। এরকম এসিডযুক্ত ফলগুলো টক স্বাদের হয়। ফলের মধ্যে যে জৈব এসিড থাকে, তা দুর্বল প্রকৃতির হয়, যেকারণে তা খাওয়া যায়। তবে ল্যাবরেটরীতে থাকা অজৈব এসিডগুলো কোন অবস্থাতে স্পর্শ বা স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করা যাবে না, তা সাথে সাথে ক্ষত সৃষ্টি করবে।
ক্ষয়কারী: এসিডগুলো রাসায়নিকভাবে সক্রিয় হওয়াতে সহজে বিক্রিয়া করে। একারণে এসিডগুলো ক্ষয়কারী পদার্থ। উদাহরণস্বরূপ এসিডের মধ্যে এক খন্ড লোহার পাত রাখলে পৃষ্ঠতল ক্ষয়ে ঝাঁজরা হয়ে যাবে।
লিটমাস পরীক্ষা: লিটমাস পেপার এসিডিক ও ক্ষারীয় পরিবেশে ভিন্ন রং ধারণ করার মাধ্যমে এসিড ও ক্ষার শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এসিড নীল বর্ণের লিটমাস পেপারকে লাল বর্ণে পরিণত করে। তেঁতুল বা আচারের মধ্যেও পানিতে সিক্ত নীল লিটমাস যোগ করলে তা লাল বর্ণ ধারণ করবে।
এসিড শনাক্তকারী বিভিন্ন বিক্রিয়া
আমরা এই অধ্যায়ের আলোচনার শুরুতে বলেছিলাম এসিড ও ক্ষারক নিয়ে জানার একটা দিক হলো আরো বিস্তৃত পরিসরে এই ধারণাগুলো প্রয়োগ করা যায়। আমরা এই অংশে শক্তিশালী এসিড ধাতব হাইড্রোক্সাইড, ধাতব অক্সাইড, সক্রিয় ধাতু এবং ক্ষারধর্মী লবণের সাথে কীভাবে বিক্রিয়া করে তা দেখবো।
আমরা সক্রিয় ধাতু এবং ক্ষারধর্মী লবণকে সরাসরি ক্ষার বা ক্ষারকের অন্তর্ভুক্ত সাধারণত করি না। কিন্তু বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখবো এদের ক্ষারধর্ম আছে- শক্তিশালী এসিডের সাথে বিক্রিয়ায় নিরপেক্ষ লবণ তৈরি করে। শুধু একটা জায়গাতেই ভিন্নতা থাকবে- লবণের সাথে পানির পরিবর্তে অন্য কোন উৎপাদ তৈরি হবে।
প্রশমন বিক্রিয়া
ধাতুর হাইড্রোক্সাইডের সাথে এসিডের বিক্রিয়া
ধাতুর হাইড্রোক্সাইড অর্থাৎ ক্ষারের সাথে এসিড প্রশমন বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে।
NaOH + HCl → NaCl + H₂O
ধাতুর অক্সাইডের সাথে এসিডের বিক্রিয়া
আমরা বলেছি সকল প্রকার ক্ষারক প্রশমন বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। কাজেই ক্ষারধর্মী ধাতব অক্সাইডগুলোও প্রশমন বিক্রিয়ায় অংশ নেয়।
CaO + 2HCl → CaCl2 + H2O
CuO + H2SO4 → CuSO4 + H2O
Na2O + 2HNO3 → 2NaNO3 + H2O
সক্রিয় ধাতুর সাথে বিক্রিয়া
ধাতুর হাইড্রোক্সাইড ও অক্সাইডগুলো ক্ষারক হিসেবে এসিডের সাথে প্রশমন বিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে লবণ ও পানি তৈরি হয়। অন্যদিকে সরাসরি সক্রিয় ধাতুর সাথে বিক্রিয়া অনেকটা অনুরূপ, তবে এক্ষেত্রে পানির পরিবর্তে লবণের সাথে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
2Na + 2HNO3 → 2NaNO3 + H2↑
Mg + H2SO4 → MgSO4 + H2↑
(↑) চিহ্ন দিয়ে বোঝাচ্ছে গ্যাসীয় পদার্থ, যেটা বিক্রিয়া স্থান থেকে মুক্ত হয়ে চলে যায়।
ক্ষারীয় প্রকৃতির লবণের সাথে বিক্রিয়া
আমরা আলোচনা করেছি তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের লবণ নিরপেক্ষ হলেও দুর্বল এসিড ও তীব্র ক্ষারের লবণ ক্ষারধর্মী। ক্ষারধর্মী লবণ তীব্র এসিডের সাথে বিক্রিয়াতে অনেকটা ক্ষারের মত আচরণ করবে- এবং নিরপেক্ষ লবণ ও দুর্বল এসিড তৈরি করবে। Na, K, Ca ধাতুগুলোর ধাতব কার্বনেট ও বাইকার্বনেট লবণ ক্ষারধর্মী হয়ে থাকে।
ধাতব কার্বনেটের সাথে লঘু এসিডের বিক্রিয়া
CaCO3 একটি ক্ষারধর্মী ধাতব কার্বনেট। তীব্র এসিড, HCl-এর সাথে এটি নিরপেক্ষ CaCl2 লবণ তৈরি করে। পাশাপাশি দুর্বল এসিড H2CO3 তৈরি হলেও সেটা অস্থিতিশীল বলে তৎক্ষণাৎ ভেঙে গিয়ে H2O ও CO2 উৎপন্ন করে। চূড়ান্ত বিক্রিয়াটি দাঁড়াবে-
CaCO₃ + 2HCl → CaCl₂ + H₂O + CO2↑
একইভাবে,
Na₂CO₃ + H₂SO₄ → Na₂SO₄ + H₂O + CO2↑
K₂CO₃ + 2HNO₃ → 2KNO₃ + H₂O + CO2↑
উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড শনাক্তকারী পরীক্ষা
ওপরের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড বুদবুদ আকারের বেরিয়ে আসতে থাকে। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই বুদবুদ কার্বন ডাইঅক্সাইড কিনা তা শনাক্ত করা যায়-
CO2 কে চুনের পানি [ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, Ca(OH)2] এর মধ্যে চালনা করলে চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম কার্বনেট, CaCO3) তৈরি হয়। CaCO3 পানিতে অদ্রবণীয়, ফলে এই পর্যায়ে দ্রবণটি ঘোলা দেখায়।
Ca(OH)₂ + CO2 → CaCO₃ + H₂O
এই ঘোলা দ্রবণে আরো CO2 চালনা করতে থাকলে অতিরিক্ত CO2 ও H₂O পুনরায় CaCO₃-এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট [Ca(HCO₃)2] তৈরি করে। Ca(HCO₃)2 পানিতে দ্রবণীয়, ফলে চুনের পানি পুনরায় স্বচ্ছ হয়ে যায়।
CaCO₃ + H₂O + CO2 → Ca(HCO₃)2
ধাতব বাইকার্বনেটের সাথে লঘু এসিডের বিক্রিয়া
ধাতব বাইকার্বনেটগুলোও ক্ষারধর্মী লবণ। কাজেই এরাও একদমই অনুরূপভাবে লঘু এসিডের সাথে বিক্রিয়া করবে।
Ca(HCO₃)2 + 2HCl → CaCl₂ + 2H₂O + 2CO2↑
2NaHCO₃ + H₂SO₄ → Na₂SO₄ + 2H₂O + 2CO2↑
K₂CO₃ + 2HNO₃ → 2KNO₃ + H₂O + CO2↑