- বিজ্ঞান ও এর প্রয়োগক্ষেত্র এবং শাখাবিন্যাস
- প্রথম অধ্যায় (ভৌত রাশি ও পরিমাপ) – রাশি, একক ও মাত্রা
পদার্থবিজ্ঞানে পরিমাপের গুরুত্ব
বর্তমান সময়ের বিজ্ঞান ও গবেষণায় পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরা যাক সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কেউ কাজ করছে। তাহলে কতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে, উৎপাদন পরিবহনে কতটুকু খরচ হচ্ছে, কতটা দূষণকারী পদার্থ উৎপন্ন হচ্ছে এরকম বিভিন্ন বিষয়ের পরিমাপ তার সাথে চলে আসবে। এবং প্রায় যেকোন গবেষণার ক্ষেত্রেই পরিমাপের এই বিষয়টা সত্য। পদার্থবিজ্ঞানে আমরা দেখবো আমরা প্রচুর পরিমাণে গাণিতিক কাজ করি। তো এজন্য আমরা সাধারণত পদার্থবিজ্ঞানের একদম শুরুতেই পরিমাপের ধারণাগুলো থেকে আসি। আমরা এই অংশে রাশি, একক ও মাত্রা নিয়ে জানবো, যা পরিমাপের জন্য অত্যন্ত জরুরী কিছু ধারণা।
ভৌত জগৎ
ভৌত বলতে আমরা বোঝাই জড়। যেমন সিরিজের প্রথম অংশে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে আমরা ভৌত বিজ্ঞান ও জৈবিক বিজ্ঞান দুটো অংশে ভাগ করেছিলাম। ভৌত জগৎ বলতে আমরা বস্তুজগৎ বা জড় জগৎ বুঝি। ইংরেজিতে বোঝানোটা তুলনামূলক সহজ, যা কিছুর ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স আছে, তার সবই ভৌত জগতের অংশ।
ভৌত রাশি
পদার্থবিজ্ঞানে আমাদের বিভিন্ন পরিমাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। ভৌত জগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায়, তাকে ভৌত রাশি (Physical Quantity) বা সংক্ষেপে শুধু রাশি বলে। যেমন কোন বইয়ের ভর, কোন টেবিলের দৈর্ঘ্য, কোন গাড়ির বেগ প্রভৃতি আমরা পরিমাপ করতে পারি, এগুলো রাশির কিছু উদাহরণ।
অন্যদিকে কেউ যদি বলে আমার অনেক দুঃখ, এই দুঃখের পরিমাণ পদার্থবিজ্ঞানে রাশি হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ দুঃখ একটা অনুভূতি, এটা জড়জগতের অংশ না বা এটার ফিজিক্যাল অস্তিত্ব নেই। আবার ১ বড় না ২ বড়, অমুক ভাইয়ের মন বড়- এখানে ১, ২ কিংবা মন কোনটাই ভৌত রাশি না। ১, ২ বা সংখ্যা বা অক্ষরগুলো দিয়ে আমরা বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ করি, কিন্তু সংখ্যা বা অক্ষরগুলো কিন্তু জড় জগতের অংশ না।
রাশির অগণিত উদাহরণ দেয়া যায়, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ক্ষেত্রফল, আয়তন, ওজন, তাপমাত্রা, কাঠিন্য, অবস্থান, বেগ, উপাদান, স্থিতিস্থাপকতা, তাপ পরিবাহিতা, অপরিবাহিতা, ঘনত্ব, তাপ, চাপ, গলনাঙ্ক, স্ফূটনাঙ্ক,… এবং আরো অনেক। কিন্তু মজার একটা বিষয় হলো মাত্র ৭টি রাশি ব্যবহার করেই সব রাশি পাওয়া সম্ভব। এই ৭টি রাশিকে মৌলিক রাশি বলে। একাধিক মৌলিক রাশির সমন্বয়ে লদ্ধ রাশি পাওয়া যায়।
মৌলিক রাশি: যেসকল রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ অর্থাৎ, অন্য কোন রাশির ওপর নির্ভরশীল নয়, সেগুলো মৌলিক রাশি। মৌলিক রাশি ৭টি- দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, তাপমাত্রা, পদার্থের পরিমাণ, দীপন তীব্রতা।
লদ্ধ রাশি: মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে আরো রাশি গঠন করা হলে তাদেরকে লদ্ধ রাশি বলে। মৌলিক রাশি ছাড়া সব রাশিই লদ্ধ রাশি।
একক
রাশি পরিমাপ করতে অবশ্যই একক (Unit) প্রয়োজন হয়। যেমন ধরা যাক তুমি যদি বলো আমার কাছে ৫ আপেল আছে, তাহলে এর কোন অর্থ হয় না, এতে বোঝা যায় না তোমার কাছে আসলে কতখানি আপেল আছে। কিন্তু তুমি যদি বলো আমার কাছে ৫ পাউন্ড আপেল আছে বা ৫ কেজি আপেল আছে তখন আর কোন দুর্বোধ্যতা থাকে না। এই পাউন্ড বা কেজি হলো একক।
তাহলে একক কী? একক হলো একটা আদর্শ মান, যার সাথে তুলনা করে আমরা পরিমাপ করতে পারি। মানে কিনা পাঁচ কেজি অর্থ হলো এক কেজি যতটা তার পাঁচ গুণ ভর। একইভাবে আমি ২ কিলোমিটার হেঁটেছি অর্থ হলো ১ কিলোমিটারের ২ গুণ বা ১ মিটারের ২০০০ গুণ হেঁটেছি।
মৌলিক রাশির একককে মৌলিক একক ও লদ্ধ রাশির একককে লদ্ধ একক বলে। একই রাশির বিভিন্নরকম এককে মাপা যেতে পারে। যেমন দৈর্ঘ্যকে মিটার, গজ, ফুট প্রভৃতি এককে আমরা মেপে থাকি, আবার দৈনন্দিন কাজে অনেক সময় হাত দিয়েই মেপে ফেলি, এখানে হাতও কিন্তু একরকম একক।
SI একক ও এককের অন্য কিছু পদ্ধতি
এককের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন ছোটবেলায় পাড়ায় ফুটবল খেলায় গোলপোস্টের দৈর্ঘ্য ঠিক করতে আমরা পা দিয়ে মাপতাম। এক্ষেত্রে পায়ের দৈর্ঘ্য হলো দৈর্ঘ্যের একক। তবে এরকম এককের পদ্ধতি অবশ্যই সবখানে ব্যবহারযোগ্য হবে না। আবার নানারকম এককের ব্যবহার অনেকসময়ই সমস্যাপূর্ণ হতে পারে, এক অঞ্চলের ব্যবহৃত একক অন্য অঞ্চলে বোধগম্য না হতে পারে। এজন্য মৌলিক রাশিগুলোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আদর্শ কিছু একককে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
SI একক
মৌলিক রাশিগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এককগুলোকে SI একক বলে। SI বলতে বোঝায় International System of Unit (এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি)। ফরাসি ভাষায় Système International (d’Unités) থেকে SI এসেছে। মৌলিক SI এককগুলোর ভিত্তিতে আরো যৌগিক SI একক পাওয়া যায়।
SI পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলো নিচের ছকে দেখানো হলো:
রাশি (Quantity) | রাশির প্রতীক | একক (Unit) | এককের প্রতীক |
---|---|---|---|
সময় (time) | t | সেকেন্ড (second) | s |
দৈর্ঘ্য (length) | l | মিটার (meter) | m |
ভর (mass) | m | কিলোগ্রাম (kilogram) | kg |
বিদ্যুৎ (electric current) | I | অ্যাম্পিয়ার (ampere) | A |
তাপমাত্রা (temperature) | T | কেলভিন (kelvin) | K |
পদার্থের পরিমাণ (amount of substance) | n | মোল (mole) | mol |
দীপন তীব্রতা (luminous intensity) | Iₗ | ক্যান্ডেলা (candela) | cd |
গাণিতিক সমস্যার ক্ষেত্রে কথায় না লিখে আমরা সময় সাশ্রয় ও সুবিধার জন্য রাশির নাম বা একক কথায় না লিখে প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করে থাকি। যেমন- সময় = 5 সেকেন্ড না লিখে t = 5 s লেখা। রাশির প্রতীক বাঁকানো অক্ষর বা ইটালিকে লেখা নিয়ম (যেমন t না লিখে t), তবে এটা স্ট্রিক্টলি অনুসরণ করা আবশ্যক না, খাতায় লেখার সময় অনেক সময়ই আমরা সাধারণ সোজা অক্ষরে লিখে থাকি।
এককের অন্য কিছু পদ্ধতি
SI এককের বাইরে এককের আরো কিছু পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন-
MKS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক মিটার (m), তাপমাত্রার একক কেলভিন (K), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
CGS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক সেন্টিমিটার (cm), ভরের একক গ্রাম (g), সময়ের একক সেকেন্ড (s)
FPS পদ্ধতি: দৈর্ঘ্যের একক ফুট (ft), ভরের একক পাউন্ড (lb), সময়ের একক সেকেন্ড (s)।
MKS পদ্ধতির সাথে SI পদ্ধতির কিন্তু একটু পার্থক্য আছে। MKS পদ্ধতিতে তিনটি রাশির একক নির্দিষ্ট করা, অন্যদিকে SI পদ্ধতিতে মৌলিক ৭টি রাশিরই সুসংজ্ঞায়িত একক আছে।
আরেকটা মজার জিনিস এখানে, পাউন্ডকে lb দ্বারা প্রকাশ করা হয়, এটা আসলে একটা রোমান একক থেকে এসেছিলো, যার নাম লিব্রা (libra), এজন্য এরকম।
উপসর্গ বা গুণিতক বা prefix
একটা টেবিলের দৈর্ঘ্য ১ মিটার, এটা বলতে, লিখতে বা বুঝতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বগুড়া থেকে ঢাকার দূরত্ব বলার বেলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫০০ মিটার এভাবে বলাটা মোটেও প্রায়োগিক নয়, বরং আমরা এভাবে বলি যে ১৮৫.৫ কিলোমিটার। আবার মানুষের চুলের ব্যাস ০.০০০০৭৫ মিটার বলার থেকে ৭৫ মাইক্রোমিটার বলাটা অনেক সুবিধাজনক।
এরকম প্রয়োজনে SI এককর সাথে বিভিন্ন গুণিতক বা উপসর্গ ব্যবহার হয়। যেমন 1 km মানে 1 x 103 m। আমার মতে নিচের চার্টটা তোমাদের মনে রাখা উচিৎ, বিভিন্ন সময়ে এককের সাথে উপসর্গগুলোর ব্যবহার তোমরা দেখবে। এখানে এটা খেয়াল রেখো কিলো পর্যন্ত সব উপসর্গ ছোট হাতের অক্ষরে এবং মেগা থেকে পরবর্তীগুলো বড় হাতের অক্ষরে লেখা হয়।

একটা বিষয় এখানে- কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষেত্রে আমরা যখন কিলো, মেগা, গিগা বা টেরা ব্যবহার করি, তখন কিন্তু আমরা একটা থেকে অন্যটা 103 বা 1000 গুণ না নিয়ে 1024 গুণ নিই। আমরা দৈনন্দিন জীবনে দশভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করায় 10, 100, 1000 এর হিসেব করা সুবিধাজনক। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইসগুলো বাইনারি বা ২ ভিত্তিক পদ্ধতিতে কাজ করে, তাই ২ এর ঘাত এরকম সংখ্যার ব্যবহার এখানে উপযুক্ত। 210 বা 1024, 1000 এর বেশ কাছাকাছি বলে এখানে 1024 ব্যবহার হয়।
একক লেখার নিয়ম
পাঠ্যবই থেকে একক লেখার নিয়মগুলো এখানে যুক্ত করে দেয়া হলো-
১. কোনো রাশির মান প্রকাশ করার জন্য একটি সংখ্যা লিখে তারপর একটি ফাঁকা জায়গা (space) রেখে এককের সংকেতটি লিখতে হয়। যেমন 2.21 kg, 7.3 × 10² m² কিংবা 22 K, শতাংশ চিহ্নও (%) এই নিয়ম মেনে চলে। তবে ডিগ্রি (°) মিনিট (‘) এবং সেকেন্ড (“) লেখার সময় সংখ্যার পর কোনো ফাঁকা জায়গা বা space রাখা হয় না।
[নোট: এখানে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ড কোণের একক। সময়ের এককের ক্ষেত্রে মিনিটের জন্য min, ও ঘন্টার জন্য h প্রতীক ব্যবহার হয়।]
২. গুণ করে পাওয়া লদ্ধ লেখার সময় দুটি এককের মাঝখানে একটি ফাঁকা জায়গা বা space দিতে হয়। যেমন: 2.35 N m
৩. ভাগ করে পাওয়া মান এককের বেলায় ঋণাত্মক সূচক বা ‘/’ (যেমন ms⁻¹ কিংবা m/s) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
[5 m/s (মিটার পার সেকেন্ড) মানে প্রতি সেকেন্ডে 5 মিটার। এটাকে 5 m s-1 এভাবেও লেখা যায়, পদার্থবিজ্ঞানে সাধারণত এভাবেই আমরা লিখি। একইভাবে m/s² কে লেখা যায় m s–²।]
৪. প্রতীকগুলো যেহেতু গাণিতিক প্রকাশ, কোনো কিছুর সংক্ষিপ্ত শব্দ নয়, তাই তাদের সাথে কোনো যতিচিহ্ন (.) বা full stop ব্যবহার হয় না।
৫. এককের সংকেত লেখা হয় সাধারণ অক্ষরে যেমন মিটারের জন্য m, সেকেন্ডের জন্য s ইত্যাদি। তবে রাশির সংকেত লেখা হয় italic বা বাঁকা অক্ষরে। যেমন ভরের জন্য m, বেগের জন্য v ইত্যাদি।
৬. এককের সংকেত ছোট হাতের অক্ষরে লেখা হয় যেমন cm, s, mol ইত্যাদি। তবে যেসব কোনো বিজ্ঞানীর নাম থেকে নেওয়া হয়েছে সেগুলো বড় হাতের অক্ষর (নিউটনের নাম অনুসারে N)। একাধিক অক্ষর হলে শুধু প্রথমটি বড় হাতের অক্ষর হবে (প্যাসকেলের নামানুসারে গৃহীত একক Pa)।
৭. এককের উপসর্গ (k, G, M) এককের (m, W, Hz) সাথে কোনো ফাঁক ছাড়া যুক্ত হবে যেমন km, GW, MHz।
৮. কিলা (10³) থেকে সব বড় উপসর্গ বড় হাতের হবে (M, G, T)।
৯. এককের সংকেতগুলো কখনো বহুবচন হবে না (25 kgs নয়, সব সময় 25 kg)।
১০. কোনো সংখ্যা বা যৌগিক একক এক লাইনে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। খুব প্রয়োজন হলে সংখ্যা এবং এককের মাঝখানে line break দেওয়া যেতে পারে।
মাত্রা
আমি যদি তোমাকে প্রশ্ন করি ৫টি তরজুম আর ৬টি বাঙ্গি মিলে কয়টি কাঁঠাল হয়, তবে তুমি কি উত্তর দিতে পারবে? যদি না পারো, তাহলে জেনে রাখো 5 m আর 6 kg মিলে কত sec তাও তুমি বলতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় 5 J + 10 n m = কত kg m2 s-2 কিংবা 5 ft + 10 m + 51 cm = কত inch তাহলে উত্তর দেয়া কিন্তু খুবই সম্ভব। কেন জানতে চাও? তাহলে তোমাকে মাত্রা বুঝতে হবে।
একটি রাশিতে বিভিন্ন মৌলিক রাশি কোন সূচক বা পাওয়ার বা ঘাতে রয়েছে, তাকে মাত্রা বলে।
একটু বোঝার চেষ্টা করি। এখন মাত্রাটা একটু অনুভবের চেষ্টা করি। দৈর্ঘ্যের মাত্রা প্রকাশের প্রতীক L। ক্ষেত্রফল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, মানে কিনা দুটো দৈর্ঘ্যের গুণফল, অর্থাৎ, সূচক আকারে লিখলে দৈর্ঘ্য2। ক্ষেত্রফলের মাত্রা L2। একইভাবে আয়তনের মাত্রা L3। বেগ হলো প্রতি সেকেন্ডে সংগঠিত সরণ, সরণ মূলত দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যকে সময় দ্বারা ভাগ করলে বেগ পাওয়া যায়। ভাগ থাকলে সূচক ঋণাত্মক হয়। তাহলে বেগের মাত্রা LT-1।
মাত্রা প্রকাশে ব্যবহৃত প্রতীকগুলো হলো: ভর M, দৈর্ঘ্য L, সময় T, তাপমাত্রা (কেলভিন) K, পদার্থের পরিমাণ mol, বৈদ্যুতিক প্রবাহ A, দীপন তীব্রতা Cd। এর মধ্যে আপাতত প্রথম তিনটি জানা তোমার সবচেয়ে বেশি দরকার। অনেক সময় তৃতীয় বন্ধনীতে মাত্রা নির্দেশ করা হয়। যেমন, [বেগ] = বেগের মাত্রা = LT-1
মাত্রা কেন প্রয়োজন?
একক থাকতে মাত্রা কেন প্রয়োজন? কারণ মৌলিক রাশিগুলোর বিভিন্নরকম একক আছে, মাত্রা তেমনটি নয়। আবার বলের একক N (নিউটন) দেখে বোঝা যায় না এটা কোন কোন মৌলিক রাশি নিয়ে তৈরি হয়েছে, কিন্তু বলের মাত্রা MLT-1 থেকে বোঝা যায় এটা ভর ও দৈর্ঘ্যের গুণফলকে সময় দ্বারা ভাগ করে পাওয়া গেছে।
মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র একই মাত্রা থাকলে যোগ-বিয়োগ করা যায় এবং যোগ-বিয়োগ অবশ্যই একই এককে এনে করতে হয়। আর গুণ ভাগের ক্ষেত্রে এককও গুণ বা ভাগ করতে হবে (যেমন 30 m / 6 s = 5 m/s)।
আগের কথায় ফিরে আসি এখন। 5 J + 10 N m = কত kg m2 s-2 বের করার ক্ষেত্রে এটা জানা দরকার যে J (জুল) একটা লদ্ধ একক, যেটাকে N m বা kg m2 s-2 এভাবেও প্রকাশ করা যায়, সবগুলো ভিন্নরূপে লেখা একই একক এবং এর মাত্রা ML2T-1। মানে 5 J আর 10 N m কে 5 kg m2 s-2 আর 10 kg m2 s-2-ও বলা যায়, অর্থাৎ উত্তর 15 kg m2 s-2।
এরপরের সমস্যা, 5 ft + 10 m + 51 cm = কত inch এখানেও সবগুলোই দৈর্ঘ্যের একক বা মাত্রা L। কিন্তু এরা একই একক না, অর্থাৎ সরাসরি আমরা যোগ করতে পারবো না, যেহেতু উত্তর inch-তে চাওয়া হয়েছে তাহলে সবগুলো inch-এ কনভার্ট করে নিতে হবে। ঘটনাটা দাঁড়াবে 60 inch + 393.7 inch + 20.079 inch, অর্থাৎ উত্তর হলো 473.779 inch।